প্রতি মাসে মুখে ওয়াক্সিং করানো কতটা নিরাপদ? ত্বকের কী ক্ষতি হতে পারে বা উপকার?

মুখের অবাঞ্ছিত লোম অনেক নারীরই আত্মবিশ্বাসে প্রভাব ফেলে। তাই অনেকেই নিয়মিত ওয়াক্সিং করিয়ে থাকেন। কিন্তু প্রশ্ন হল, প্রতি মাসে মুখে ওয়াক্স করানো কি আদৌ নিরাপদ? এতে কি ত্বকের ক্ষতি হতে পারে? নাকি রয়েছে কিছু উপকারও? এই লেখায় চলুন জেনে নিই মুখে ওয়াক্সিং করার ভালো-মন্দ দুটো দিকই।


মুখে ওয়াক্সিং: কী ও কেন?

ওয়াক্সিং হলো এমন একটি পদ্ধতি যার মাধ্যমে গরম বা ঠান্ডা ওয়াক্স ব্যবহার করে লোম গোঁড়া থেকে তুলে ফেলা হয়। মুখে সাধারণত ঠান্ডা ওয়াক্স স্ট্রিপ বা হালকা গরম ওয়াক্স ব্যবহার করা হয়, যাতে ত্বক কম আক্রান্ত হয়। উপরের ঠোঁট, গাল, কপাল, থুতনি ও জলের কাছের অংশে ওয়াক্স করা হয় সবচেয়ে বেশি।


Untitled design 2025 05 17T113118.751
সাবধান! এই কাজটি করার আগে জেনে নিন সব কিছু

প্রতি মাসে মুখে ওয়াক্স করালে কী হয়?

উপকারিতা:

  1. লম্বা সময়ের জন্য লোম মুক্ত ত্বক:
    মুখে ওয়াক্সিং করলে লোম গোঁড়া থেকে উঠে যায়, ফলে তা নতুন করে বাড়তে ২–৪ সপ্তাহ সময় লাগে। মাসে একবার ওয়াক্সিং করালে মুখ পরিষ্কার ও গ্লোয়িং দেখায়।
  2. লোম পাতলা হয়:
    নিয়মিত ওয়াক্সিং করলে লোম ধীরে ধীরে পাতলা ও হালকা হয়ে যায়। অনেকে লক্ষ্য করেন, কয়েক মাস পর মুখে লোমের পরিমাণই অনেকটা কমে যায়।
  3. ত্বকের মৃত কোষ দূর হয়:
    ওয়াক্সিংয়ের সময় ত্বকের উপরের স্তরের মৃত কোষও উঠে যায়। ফলে ত্বক উজ্জ্বল ও মসৃণ হয়।
  4. পার্লার ছাড়াও বাড়িতে করা যায়:
    এখন অনেক ঘরোয়া ওয়াক্সিং কিট বাজারে পাওয়া যায়। সময় বাঁচিয়ে বাড়িতেই মুখে ওয়াক্স করা সম্ভব।

ক্ষতিকর দিক:

  1. ত্বকে জ্বালা বা লালচেভাব:
    মুখের ত্বক খুব সংবেদনশীল। ওয়াক্সিং করার পর অনেক সময় ত্বকে জ্বালা, র‍্যাশ বা লালচে ফুসকুড়ি দেখা দিতে পারে।
  2. ত্বকের বারবার টান পড়া:
    ওয়াক্সিংয়ে স্ট্রিপ টেনে তোলা হয়, ফলে ত্বকের উপর চাপ পড়ে। বারবার টান পড়লে ত্বক ঢিলে হয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে।
  3. ত্বকের রঙ পরিবর্তন:
    বিশেষত যাদের ত্বক সেনসিটিভ বা যাদের পিগমেন্টেশন প্রবণতা আছে, তাদের ক্ষেত্রে ওয়াক্সিং ত্বকে দাগ বা রঙের পরিবর্তন ঘটাতে পারে।
  4. আকস্মিক ব্রণ ও ফুসকুড়ি:
    লোম গোঁড়া থেকে উঠে গেলে সেখানে ব্যাকটেরিয়া ঢুকতে পারে, যার ফলে মুখে ব্রণ দেখা দেয়। ত্বক পরিষ্কার না রাখলে সমস্যা আরও বেড়ে যায়।
  5. হাইপারপিগমেন্টেশন:
    ওয়াক্সিংয়ের কারণে অতিরিক্ত ঘর্ষণ হলে ত্বকে কালচে ভাব বা দাগ পড়তে পারে। এটা নিয়মিত ওয়াক্সিং করলেই হতে পারে।

Untitled design 15 3
সাবধান! এই কাজটি করার আগে জেনে নিন সব কিছু

কারা নিয়মিত মুখে ওয়াক্সিং করতে পারবেন?

  • যাদের ত্বক খুব রুক্ষ বা ঘন লোম আছে
  • যাদের ত্বক অতি সংবেদনশীল নয়
  • যাদের ব্রণ বা পিগমেন্টেশনের প্রবণতা কম
  • যারা প্রতিবার পর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে পারেন

কারা মুখে ওয়াক্সিং না করানোই ভালো?

  • যাদের Rosacea, eczema, psoriasis ইত্যাদি ত্বকের সমস্যা আছে
  • যাদের মুখে অ্যাকটিভ ব্রণ বা ফোড়া রয়েছে
  • ত্বকে দাগ, পিগমেন্টেশন বা হাইপারসেনসিটিভিটি আছে
  • রেটিনল বা কেমিক্যাল পিল ব্যবহার করছেন—ওয়াক্সিং করলে ত্বক ছিঁড়ে যেতে পারে

মুখে ওয়াক্সিং করার সঠিক নিয়ম

  1. স্কিন টেস্ট করুন:
    নতুন কোনো ওয়াক্স ব্যবহার করার আগে হাতের উল্টো পাশে ব্যবহার করে টেস্ট করুন।
  2. ত্বক পরিষ্কার রাখুন:
    ওয়াক্সিংয়ের আগে মুখ পরিষ্কার করে নিন এবং ওয়াক্সিংয়ের পর ঠান্ডা জলে ধুয়ে ফেলুন।
  3. অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার করুন:
    ওয়াক্সিংয়ের পর অ্যালোভেরা জেল বা হালকা ময়েশ্চারাইজার লাগান। এতে ত্বকের জ্বালা কমে।
  4. সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন:
    ওয়াক্সিংয়ের পর বাইরে বের হলে অবশ্যই সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন, কারণ তখন ত্বক সূর্যের ক্ষতির জন্য বেশি সংবেদনশীল থাকে।
  5. মেকআপ এড়িয়ে চলুন:
    ওয়াক্সিংয়ের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মুখে ভারী মেকআপ ব্যবহার না করাই ভালো।

Untitled design 11 6
সাবধান! এই কাজটি করার আগে জেনে নিন সব কিছু

ঘরোয়া ওয়াক্সিংয়ের সময় যেসব বিষয় খেয়াল রাখা জরুরি:

  • চিনি ও মধুর হালকা ওয়াক্স ব্যবহার করুন: ঘরোয়া প্রাকৃতিক উপাদান যেমন চিনি, মধু, লেবুর রস দিয়ে ওয়াক্স তৈরি করলে কম সাইড ইফেক্ট হয়।
  • মোম গরমের তাপমাত্রা ঠিক রাখুন: অতিরিক্ত গরম ওয়াক্স মুখের ত্বক পুড়িয়ে দিতে পারে।
  • স্ট্রিপ টানার দিক ঠিক রাখুন: লোমের গঠনের উল্টো দিকে স্ট্রিপ টানুন।

বিকল্প পদ্ধতি: যদি ওয়াক্সিং সহ্য না হয়?

  1. থ্রেডিং বা টুইজিং: মুখের ছোট ছোট জায়গার জন্য ব্যবহারযোগ্য।
  2. ডার্মাপ্ল্যানিং: একটি ছোট ব্লেড দিয়ে মুখের লোম ও মৃত কোষ তুলে ফেলা হয়।
  3. ফেস রেজার: বিশেষ ফেসিয়াল রেজার ব্যবহার করে লোম কাটা যায়, যা একদম নিরাপদ এবং ব্যথাহীন।
  4. লেজার হেয়ার রিমুভাল: স্থায়ী সমাধান চাইলে লেজার উপযুক্ত বিকল্প, যদিও খরচ বেশি।

Untitled design 12 3
সাবধান! এই কাজটি করার আগে জেনে নিন সব কিছু

প্রতি মাসে মুখে ওয়াক্সিং: হ্যাঁ না?

সবশেষে বলা যায়, প্রতি মাসে মুখে ওয়াক্সিং করানো উপকারী হতে পারে যদি ত্বক সহ্য করতে পারে। তবে এর জন্য ত্বকের ধরন ও পরিচর্যার দিকটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। যদি ত্বক অতিরিক্ত সংবেদনশীল হয় বা ব্রণের প্রবণতা বেশি থাকে, তাহলে অন্য বিকল্প পদ্ধতির কথা ভাবা উচিত।



⚠️ সাবধান! এই কাজটি করার আগে জেনে নিন সব কিছু

মুখে ওয়াক্সিং শুনলে অনেকেই ভাবেন, “এ তো সহজ একটা বিউটি প্রসেস!” কিন্তু বাস্তবতা হলো, মুখের ত্বক শরীরের অন্য অংশের তুলনায় অনেক বেশি সংবেদনশীল। তাই চোখ-কান বন্ধ করে মাসে মাসে ওয়াক্সিং করিয়ে নেওয়া কখনই বুদ্ধিমানের কাজ নয়। যদি আপনি মুখে ওয়াক্সিং করানোর পরিকল্পনা করে থাকেন, তবে তার আগে আপনাকে জেনে নিতে হবে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। না হলে সাময়িক ফর্সা ও পরিষ্কার ত্বক পেতে গিয়ে ভবিষ্যতে পড়তে হতে পারে বড় সমস্যায়।

এই অংশে আমরা তুলে ধরবো—

  • মুখে ওয়াক্সিং করানো কতটা নিরাপদ,
  • কারা একে এড়িয়ে চলবেন,
  • কীভাবে সঠিকভাবে ওয়াক্সিং করবেন,
  • এবং ওয়াক্সিংয়ের পর ত্বকের যত্ন কেমন হওয়া উচিত।
Untitled design 13 3
সাবধান! এই কাজটি করার আগে জেনে নিন সব কিছু

উপসংহার

প্রতি মাসে মুখে ওয়াক্সিং করানো যেতে পারে, তবে তা ব্যক্তিভেদে আলাদা। ত্বকের প্রতিক্রিয়া বুঝে তবেই নিয়মিত ওয়াক্স করানো উচিত। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও সঠিক টেকনিক অনুসরণ করলে ওয়াক্সিং হয়ে উঠতে পারে নিরাপদ ও কার্যকর একটি বিউটি রুটিন।