ফেসিয়াল করাচ্ছেন করান, বিপদে পড়তে পারেন! (সাবধান না হলে ফেসিয়ালে ঘটতে পারে যেসব অঘটন)
ত্বকের যত্নে ফেসিয়াল যেন এখন রুটিনেরই অংশ। বিয়ে বাড়ি হোক কিংবা উৎসব, বা নিছক নিজের যত্ন – ফেসিয়াল করার চল বেড়েই চলেছে। পার্লারে গেলেই নানা ধরণের ফেসিয়ালের প্রস্তাব, ভিন্ন ভিন্ন স্কিন টাইপের জন্য আলাদা আলাদা প্যাকেজ। কিন্তু আপনি জানেন কি, এই ফেসিয়াল আপনাকে উপকারের বদলে বড় বিপদের মুখেও ফেলতে পারে?
এই ব্লগে আমরা জানবো:
- ফেসিয়াল কীভাবে কাজ করে
- কারা ফেসিয়াল থেকে উপকার পান
- কাদের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে ফেসিয়াল
- ফেসিয়ালের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
- কীভাবে নিরাপদে ফেসিয়াল করাবেন

ফেসিয়াল কীভাবে কাজ করে? (সাবধান না হলে ফেসিয়ালে ঘটতে পারে যেসব অঘটন)
ফেসিয়াল মূলত একটি ত্বক পরিষ্কার করার ও ত্বকের রক্তসঞ্চালন বাড়ানোর কৌশল। এতে ক্লিনজিং, স্ক্রাবিং, স্টিমিং, ম্যাসাজ, প্যাক—এই ধাপগুলি থাকে। এতে মৃত কোষ দূর হয়, মুখ পরিষ্কার হয় এবং সাময়িকভাবে একধরনের উজ্জ্বল ভাব দেখা যায়। কিন্তু সব ধরনের ত্বক এই ফেসিয়াল সহ্য করতে পারে না।

উপকার কারা পান? (সাবধান না হলে ফেসিয়ালে ঘটতে পারে যেসব অঘটন)
সঠিক স্কিন টাইপ অনুযায়ী সঠিক ফেসিয়াল করালে ত্বকের গ্লো বাড়ে, ব্রণ কমে, ব্ল্যাকহেডস দূর হয়, স্কিন টোন ইভেন হয় এবং ত্বক ফ্রেশ লাগে। বিশেষ করে:
- ড্রাই স্কিন
- নির্জীব ত্বক
- স্বাভাবিক ত্বক
তবে এই সব ক্ষেত্রেও প্রতি মাসে একবারের বেশি ফেসিয়াল করা উচিত নয়।
বিপদে পড়তে পারেন যাঁরা! (সাবধান না হলে ফেসিয়ালে ঘটতে পারে যেসব অঘটন)
যদিও ফেসিয়াল উপকারি মনে হয়, কিন্তু নিচের সমস্যা থাকলে আপনার জন্য এটি বিপজ্জনক হতে পারে—
১. সংবেদনশীল ত্বক (Sensitive Skin)
এই ধরনের ত্বকে ফেসিয়ালের কেমিক্যালস ও স্ক্রাবিং তীব্র র্যাশ, জ্বালা বা লালচেভাব সৃষ্টি করতে পারে।
২. ব্রণপ্রবণ ত্বক (Acne-Prone Skin)
ব্রণ থাকলে অতিরিক্ত ম্যাসাজ, তাপ বা স্ক্রাব ব্রণ আরও বাড়িয়ে দিতে পারে।
৩. অ্যালার্জির সমস্যা থাকলে
অনেক ফেসিয়াল প্রোডাক্টে থাকে পারফিউম, প্রিজারভেটিভ ও অন্যান্য রাসায়নিক যা অ্যালার্জি সৃষ্টি করতে পারে।
৪. ওপেন পোর্স বা স্কিন ইনফেকশন
ফেসিয়ালের স্টিমিং বা ঘষাঘষি ত্বকের ইনফেকশন আরও ছড়িয়ে দিতে পারে।

ফেসিয়ালের সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া (সাবধান না হলে ফেসিয়ালে ঘটতে পারে যেসব অঘটন)
● ত্বক লাল হয়ে যাওয়া
অনেক সময় ফেসিয়াল করার পর ত্বক বেশ কিছুক্ষণ লাল থাকে। কিন্তু যদি সেটা দীর্ঘস্থায়ী হয়, তা বিপদের লক্ষণ।
● ব্রণ বেড়ে যাওয়া
ফেসিয়ালের পর অনেকেরই হরমোনাল বা পিম্পল বাড়ে, বিশেষত যারা স্কিন সেনসিটিভ।
● চুলকানি ও র্যাশ
ফেসিয়ালের কোনো উপাদানে ত্বকের অ্যালার্জি থাকলে চুলকানি শুরু হয় এবং ফুসকুড়িও দেখা দিতে পারে।
● ত্বকের জ্বালা
কিছু কিছু ফেসিয়াল উপাদান, বিশেষ করে ব্লিচ বা অ্যাসিড ভিত্তিক মাস্ক ত্বকে জ্বালা সৃষ্টি করে।
💢 ফেসিয়ালের ১০টি সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া (Side Effects of Facial): (সাবধান না হলে ফেসিয়ালে ঘটতে পারে যেসব অঘটন)
১. ✅ ত্বকে লালচেভাব (Redness)
ফেসিয়ালের পর স্ক্রাবিং, স্টিম বা কেমিক্যালের কারণে ত্বকে অস্বাভাবিক লালচেভাব দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে সেনসিটিভ স্কিনে বেশি হয়।
২. ✅ ব্রণ (Pimples / Breakouts)
ফেসিয়ালের পরে অনেকের মুখে নতুন ব্রণ দেখা দেয়। এটি স্কিনে অয়েল উৎপাদন বা ব্যাকটেরিয়ার কারণে হতে পারে।
৩. ✅ চুলকানি ও অ্যালার্জি (Itching & Allergic Reactions)
ফেসিয়ালের কেমিক্যাল বা পারফিউমে যদি আপনার অ্যালার্জি থাকে, তবে র্যাশ, চুলকানি, ফুসকুড়ি বা জ্বালা হতে পারে।
৪. ✅ ত্বক খসখসে বা শুষ্ক হয়ে যাওয়া
অতিরিক্ত ক্লিনজিং বা স্ট্রং স্ক্রাব ব্যবহারে ত্বকের প্রাকৃতিক তেল নষ্ট হয়, ফলে ত্বক শুষ্ক ও রুক্ষ হয়ে পড়ে।
৫. ✅ জ্বালা ও পোড়া ভাব (Burning Sensation)
ফেসিয়ালের কোনো উপাদান ত্বকে সহ্য না হলে স্কিনে পোড়ার মতো অনুভব হতে পারে।
৬. ✅ ত্বকের সংক্রমণ (Skin Infection)
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা না মানলে বা অপরিষ্কার যন্ত্রপাতি ব্যবহারে ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন হতে পারে।
৭. ✅ অতিরিক্ত সংবেদনশীলতা (Increased Sensitivity)
ফেসিয়ালের পর ত্বক সূর্যরশ্মি, ধুলো বা মেকআপে অতিরিক্ত সংবেদনশীল হয়ে পড়তে পারে।
৮. ✅ স্কিনে ছোপ বা দাগ (Patchiness or Pigmentation)
ফেসিয়ালের কিছু উপাদান হাইপারপিগমেন্টেশন বা হালকা দাগ তৈরি করতে পারে, বিশেষ করে যদি সঠিকভাবে না করা হয়।
৯. ✅ ওপেন পোর্স বড় হয়ে যাওয়া
স্টিমের ফলে অনেক সময় ওপেন পোর্স আরও বেশি খুলে যায়, যা ত্বকের টেক্সচার খারাপ করে।
১০. ✅ চুল পড়া (Hair Fall on Face Area)
ফেসিয়ালের সময় ব্যবহৃত কিছু উপাদান বা ম্যাসাজের টানাপোড়েন মুখের লোমকূপ দুর্বল করে চুল পড়ার কারণ হতে পারে।

কিছু সাধারণ ভুল, যা বিপদের কারণ হতে পারে (সাবধান না হলে ফেসিয়ালে ঘটতে পারে যেসব অঘটন)
❌ স্কিন টাইপ না বুঝেই ফেসিয়াল করানো
সব ফেসিয়াল সব ত্বকের জন্য নয়। স্কিন টাইপ না বুঝে ফেসিয়াল করালে বিপদ নিশ্চিত।
❌ ঘন ঘন ফেসিয়াল করা
প্রতি সপ্তাহে ফেসিয়াল করলে ত্বকের প্রাকৃতিক অয়েল নষ্ট হয়, ফলে ত্বক শুষ্ক ও রুক্ষ হয়ে পড়ে।
❌ অযোগ্য বিউটিশিয়ানের হাতে পড়া
পার্লারে যারা স্কিন নিয়ে সঠিক ট্রেনিং পাননি, তাঁদের দ্বারা ত্বকের ক্ষতি হতেই পারে।
❌ ঘরে বসে ইউটিউব দেখে ফেসিয়াল
ইন্টারনেট দেখে ফেসিয়াল করা অনেকেই পছন্দ করেন, কিন্তু স্কিনের জ্ঞান না থাকলে বাড়িতে বসে নিজের মুখেই ক্ষতি করে বসেন।
বিপদ এড়াতে যা করবেন (সাবধান না হলে ফেসিয়ালে ঘটতে পারে যেসব অঘটন)
✅ স্কিন টেস্ট করান
ফেসিয়ালের আগে ছোট একটি প্যাচ টেস্ট করিয়ে নিন। এতে বোঝা যাবে আপনি কোনো উপাদানে অ্যালার্জিক কিনা।
✅ স্কিন টাইপ অনুযায়ী ফেসিয়াল বাছুন
ড্রাই, অয়েলি, সেনসিটিভ বা কম্বিনেশন—যে স্কিনই হোক, তার জন্য আলাদা ফেসিয়াল প্রয়োজন।
✅ বিশ্বস্ত পার্লারে যান
সার্টিফায়েড বিউটিশিয়ান ও পরিচ্ছন্ন সরঞ্জাম ব্যবহার করে এমন পার্লারে ফেসিয়াল করান।
✅ ঘন ঘন না করানোই ভালো
প্রতি মাসে একবারই যথেষ্ট, তার বেশি করলে উপকারের থেকে ক্ষতির সম্ভাবনা বেশি।
✅ ঘরে তৈরি প্রাকৃতিক ফেসিয়াল বেছে নিন
প্রাকৃতিক উপাদান যেমন দুধ, মধু, টক দই, বেসনের ফেস প্যাক ইত্যাদি ত্বকের জন্য তুলনামূলক নিরাপদ।

ঘরে বসে নিরাপদ ফেসিয়াল: একটি উদাহরণ( সাবধান না হলে ফেসিয়ালে ঘটতে পারে যেসব অঘটন)
উপকরণ:
- ২ চামচ বেসন
- ১ চামচ টক দই
- ১ চামচ মধু
- ১ চিমটে হলুদ
পদ্ধতি:
সব উপাদান মিশিয়ে মুখে লাগান। ২০ মিনিট রেখে কুসুম গরম জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এতে ত্বক পরিষ্কার হবে ও র্যাশের ঝুঁকিও কম থাকবে।

উপসংহার (সাবধান না হলে ফেসিয়ালে ঘটতে পারে যেসব অঘটন)
ত্বকের যত্নে ফেসিয়াল নিঃসন্দেহে উপকারী, তবে ভুল পদ্ধতি বা অজ্ঞানতা ত্বকের মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে। ত্বকের স্বাস্থ্যের দিকটা আগে ভাবুন, ট্রেন্ড বা পার্লারের অফারের দিকে নয়। ফেসিয়ালের আগে সবসময় স্কিন টাইপ বুঝে, ট্রাস্টেড এক্সপার্টের কাছ থেকে করান। নয়তো ফেসিয়ালের উপকারের বদলে ত্বকের ক্ষতি আপনার নতুন মাথাব্যথার কারণ হতে পারে।